Main menu

Pages

সিভি লেখার নিয়ম

 চাকরি থেকে শুরু করে জীবনে অনেক ক্ষেত্রে সিভি, Curriculum Vitae বা জীবন বৃত্তান্ত অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। চাকরির ক্ষেত্রে সিভির গুরুত্ব অনেক বেশি। বর্তমানে চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতা একটা মানসম্মত সিভি (CV) এই প্রতিযোগিতায় আপনাকে অনেকটা এগিয়ে রাখতে পারে।

প্রথম দেখাতেই যদি আপনার সিভিটি নির্বাচনকের পছন্দ না হয়, তাহলে আপনার ইন্টারভিউ এর জন্য ডাক পাওয়ার সুযোগ খুবই কম। অনেক ক্ষেত্রে নির্বাচক এক পলক সিভি দেখে পছন্দ হলে তাকে ইন্টারভিউ এর জন্য নির্বাচন করে। তাই মানসম্মত সিভি আপনাকে অনেকটা সুবিধা প্রদান করতে পারে‌।

কিন্তু এখন আমরা অনেকেই কম্পিউটারের দোকান থেকে তাদের ফরম্যাট অনুযায়ী সিভি লিখি কারন বেশিরভাগ লোকই সঠিক ভাবে সিভি লিখতে জানেন না। এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সকল চাকরির জন্য এই ধরনের সিভি ফরম্যাট অনুসরণ করে কম্পিউটারের দোকান গুলো।

এইসব কথা বিবেচনা করে আপনার নিজের সিভি সবসময় উচিৎ আপনার নিজেরই বানানো। এই লেখাতে সিভি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো এবং কয়েকটি সহজ উপায় সম্পর্কে জানাবো যেগুলো অনুসরণ করে আপনি সহজেই মানসম্মত একটা সিভি তৈরি করতে পারবেন।  



সিভি কি? (What Is Curriculum Vitae)

সিভি(CV) বা Curriculum Vitae হচ্ছে একজন ব্যাক্তির শিক্ষা এবং চাকরি জীবনের সারাংশ। মূলত এটা চাকরির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ব্যবহারিত হয়। এটা সাধারণত 2 পাতার হয়ে থাকে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটা ইংলিশে লেখা হয়ে থাকে, কিন্তু মাঝে মাঝে এটা বাংলাও লেখা হয়।

সিভি ও রেজ্যুমে এর পার্থক্য 

CV ও রিজিউম (Resume) দুইটাই আমাদের দেশে জীবন বৃত্তান্তের কাজে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এই দুইটার মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে। সিভি (CV) চাকরি সহ অন্যান্য কাজেও ব্যবহার করা হয়, আর রিজিউম (Resume) শুধু মাত্র চাকরির উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়।

সিভি’র কোন লিমিটেশন নেই। সিভিতে চাকরির অভিজ্ঞতা, শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং অন্যান্য আনুষাঙ্গিক বিষয় শেয়ার করতে পারবেন। সিভিতে যতগুলো পৃষ্ঠা দরকার, ব্যবহার করতে পারবেন।

রিজিউম (Resume) শুধু মাত্র চাকরিকে উদ্দেশ্য করে তৈরি করা হয়। এজন্য রিজিউম এ চাকরি আনুষাঙ্গিক বিষয়, অভিজ্ঞতা এবং অন্যান্য বিষয়গুলো ১ থেকে ২ পৃষ্ঠার মধ্যে তুলে ধরতে হয়‌। 

সিভি (CV)-তে কি কি তথ্য থাকা উচিত? 

বেশিভাগ সিভি সাধারণত একই রকম হয়ে থাকে, এবং কিছু কিছু তথ্য সকল ধরনের সিভিতে প্রয়োজন পড়ে। আবার চাকরির ধরন অনুযায়ী কিছু কিছু সিভি’র কিছু কিছু অংশ সবসময় পরিবর্তনশীল। এইসকল বিষয় নিজের মতো করে প্রয়োজন অনুসারে লিখতে হবে। এই সকল বিষয় বিবেচনা করে সিভিতে যে সকল তথ্য থাকা জরুরি তা নিচে দেওয়া হলো:

নাম ও ঠিকানাঃ (Name And Address) 

সার্টিফিকেট বা জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী আপনার সম্পূর্ণ নাম সিভিতে দিতে হবে। এবং সঠিক ঠিকানা যেখান থেকে আপনার সাথে যোগাযোগে করা সম্ভব হবে সেই ঠিকানা দিতে হবে। পাশাপাশি আপনার ফোন নাম্বার ও সোস্যাল মিডিয়া লিংক ও দিতে পারেন। এছাড়াও বাধ্যতামূলক ভাবে আপনার ইমেইল অ্যাড্রেস যুক্ত করবেন সিভিতে। এক্ষেত্রে আপনার পূর্ণ নাম দিয়ে একটা ইমেইল এড্রেস তৈরি করে নিন। 

শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ (Educational Qualification) 

সিভি’তে আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা সঠিক ভাবে উপস্থাপন করুন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে SSC থেকে শুরু করে পরের সকল ডিগ্রি গুলোকে তুলে ধরবেন প্রতিষ্ঠানের নাম সহ। অপ্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করার দরকার নেই যেমন: কোন পরীক্ষায় কোন বিষয় কত নাম্বার পেয়েছেন এই জাতীয় তথ্য প্রদান থেকে বিরত থাকুন।

অভিজ্ঞতাঃ (Experience) 

কাজের অভিজ্ঞতা বা (Experience) সিভি’র একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আপনি পূর্বে কোন প্রতিষ্ঠানের কত বছর, কোন কোন পদে, কি কি কাজ করেছেন সেই সকল বিষয় এইখানে সংক্ষিপ্ত ভাবে তুলে ধরবেন। একাধিক প্রতিষ্ঠানের কাজ করে থাকলে এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলোতে আপনার কাজের বিবরন যতদুর সম্ভব তুলে ধরা যায় তা তুলে ধরবেন। 

দক্ষতাঃ (Skills) 

চাকরির অভিজ্ঞতা ও শিক্ষাগত যোগ্যতা ছাড়াও অন্যান্য দক্ষতা আপনাকে চাকরির প্রতিযোগিতায় একধাপ এগিয়ে রাখবে। বর্তমানে কম্পিউটার ও ভাষা দক্ষতা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়

আপনি কম্পিউটারের কি কাজ পারেন, এবং কোন কোন ভাষায় আপনার দক্ষতা আছে সেই সকল বিষয় সিভি’তে সংক্ষিপ্ত ভাবে লেখতে হবে।

এছাড়াও অন্যান্য বিশেষ দক্ষতা যেগুলো আপনার চাকরি জন্য গুরুত্বপূর্ণ সেইগুলো বিশেষ ভাবে তুলে ধরতে পারেন। 

রেফারেন্সঃ (Reference) 

সিভিতে রেফারেন্স (Reference) হিসাবে এক বা একাধিক ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা উচিত। এক্ষেত্রে বেশিভাগ লোক ভুল করে। তারা রেফারেন্স হিসেবে তাদের আত্মীয়-স্বজনের নাম দিয়ে দেয়। রেফারেন্স এ এমন দুই অথবা তিনজনের ব্যবহার করুন যারা আপনাকে ভালো ভাবে চিনে এবং তাদের সাথে আপনার কোন প্রকার আত্মীয়তার সম্পর্ক নেই। এক্ষেত্রে আপনি যে কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করেছেন সেখানকার কোন শিক্ষকের নাম ব্যবহার করতে পারেন যে আপনাকে ভালো ভাবে চিনে। এছাড়াও যে প্রতিষ্ঠানের আবেদন করেছেন সেখানকার কেউ যদি আপনার পরিচিত থাকে তাহলে তার নাম ও ব্যবহার করতে পারেন। এক্ষেত্রে ভুল বা ভুয়া তথ্য দেওয়া থেকে বিরত থাকুন কারণ আবেদনকৃত প্রতিষ্ঠান আপনার দেওয়া রেফারেন্স থেকে ফোন দিবে যাচাই করতে পারে। 

ছবি সংযোজনঃ (Photo) 

সিভি’র উপর পাশে অংশে আপনার সদ্য তোলা ছবি ব্যবহার করুন। ছবির সাইজ পাসপোর্ট হতে হবে এবং অবশ্যই ছবি ফর্মাল ড্রেসে তুলবেন এবং কালো চশমা পরা যাবে না। 

স্বাক্ষর ও তারিখঃ (Signature And Date)

সিভি’র নিচের অংশে স্বাক্ষরের স্ক্যান কপি এবং তারিখ যুক্ত করতে হবে।

সিভি’র ফরম্যাট কেমন হওয়া উচিৎ? 

সিভি’র ফরম্যাট অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়‌‌। যেহেতু চাকরির ক্ষেত্রে বেশি ব্যবহার হয় তাই এর দৈর্ঘ্য ১ বা ২ পৃষ্ঠার মধ্যে হওয়া ভালো। কাগজ বা অনলাইন ফরম্যাটের থেকে সর্বদা আপনাকে A4 সাইজ পেপারে সিভি লিখতে হবে। সিভি লেখার সময় সতর্ক থাকুন যাতে কোন প্রকার গ্রামার ও অন্যান্য ভুল না হয়। সিভি’তে এই জাতীয় ভুল এড়িয়ে চলা অত্যন্ত জরুরি। 

সিভি লেখার নিয়ম 

আগে জেনেছি সিভিতে কি কি তথ্য থাকা জরুরি এবং কোন ফরম্যাটে তা লিখতে হবে। বর্তমানে সিভি লেখা অনেক সহজ। নতুন নতুন পদ্ধতিতে খুব কম সময়ে সিভি লেখা যায়।

বর্তমানে জনপ্রিয় সফটওয়্যার এম এস ওয়্যাড ব্যবহার করে সহজেই সিভি তৈরি করা যায়। এখানে বাই ডিফল্ট কিছু ফরম্যাট দেওয়া থাকে সিভি’র জন্য। এছাড়াও নিজে ফরম্যাট তৈরি করে সেটা ব্যবহার করতে পারেন।

সিভি মেকিং ওয়েবসাইট বর্তমানে অনেক জনপ্রিয়। এইসকল ওয়েবসাইট ব্যবহার করে ফ্রি একটা সিভি তৈরি করতে পারবেন। এগুলো আরো কিছু বিশেষ সুবিধা রয়েছে যেমন: একাধিক ফরম্যাট পাবেন, চাকরির ধরন অনুযায়ী আলাদা আলাদা সিভি সিলেক্ট করতে পারবেন, পেপার বা সাইজ ডিফল্ট থাকে।

এছাড়াও বর্তমানে অনেক মোবাইল অ্যাপ পাওয়া যায় যেগুলো ব্যবহার করে স্মাটফোন দিয়েই সিভি তৈরি করতে পারবেন।