শেখ সাদী ফার্সি কবিদের মধ্যে অন্যতম একজন। পুরো নাম আবু মুহাম্মদ মোশাররফ উদ্দিন বিন মোসলেহ উদ্দিন আবদুল্লাহ সাদি সিরাজি। তিনি ইরানের সুপ্রসিদ্ধ ‘সিরাজ’ নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা তৎকালীন শিরাজের বাদশাহ আতাবক সাদ বেন জঙ্গীর সেক্রেটারী ছিলেন। তার বাবার নাম সৈয়দ আবদুল্লাহ। মায়ের নাম মাইমুরা খাতুন।
তার জন্মের সময় নিয়ে অনেক মতভেদ রয়েছে। অনুমান করা হয় তিনি ৫৮০ হিজরী মোতাবেক ১১৮৪ খৃস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। বাল্যকালেই সাদীর পিতা ইন্তিকাল করেন। পিতার ইন্তিকালের পর মায়ের তত্ত্বাবধানে বেড়ে উঠতে থাকেন। এ সময়ে তিনি একজন পন্ডিত ব্যক্তির স্নেহধন্য হন। তিনি হলেন তাঁরই শ্রদ্ধাভাজন মামা আল্লামা কুতুবুদ্দীন শিরাজী। যিনি কিনা হালাকু খাঁর অন্যতম দরবারী বন্ধু ছিলেন।
প্রাথমিক শিক্ষা তিনি তার পিতার কাছ থেকে গ্ৰহন করেন। ছোট থাকাকালীন পিতাকে হারানো পর তিনি শিরাজের প্রখ্যাত আলেম উলামাদের সংস্পর্শে আসেন এবং জ্ঞান আহরণ করতেন। প্রথম দিকে তিনি শিরাজের সুলতান গছদদৌলা প্রতিষ্ঠিত গছদিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন। পরবর্তীতে তিনি আরো কয়েকটি মাদ্রাসায় পাঠ গ্রহণ করেন। উচ্চ শিক্ষার জন্য বাগদাদ গমন করেন এবং সেখানকার বিখ্যাত মাদরাসা নিযামিয়ায় ভর্তি হন। লেখাপড়া শেষে তিনি দেশভ্রমন শুরু করেন।
ত্রিশ বছর লেখাপড়ায়
ত্রিশ বছর দেশভ্রমণে
ত্রিশ বছর গ্রন্থ রচনায়
ত্রিশ বছর আধ্যাত্মিক চিন্তায়।
শোনা যায় তাঁর জীবনের উক্ত চারটি পর্যায় যেদিন পূর্ণ হয় সেদিনই নাকি তিনি ইন্তিকাল করেন। ধরনা করা হয় ৬৯১ হিজরী মোতাবেক ১২৯২ খৃস্টাব্দ তিনি মৃত্যুবরণ করে।
শেখ সাদী তার এই জীবনকালে তিনি আমাদের জন্য অনেক উপদেশ ও উক্তি দিয়ে গেছেন। এই পোষ্ট এ শেখ সাদী (রহঃ) এর বিখ্যাত উক্তি গুলো তুলে ধরা হলো।
শেখ সাদী (রহ.) এর বিখ্যাত উক্তি
১. অজ্ঞের পক্ষে নীরবতাই হচ্ছে সবচেয়ে উত্তম পন্থা। এটা সবাই জানলে কেউ অজ্ঞ হতো না।
২. অকৃতজ্ঞ মানুষের চেয়ে কৃতজ্ঞ কুকুর শ্রেয়।
৩. আমি আল্লাহকে সবচেয়ে বেশি ভয় পাই। তার পরেই ভয় পাই যে আল্লাহকে মোটেই ভয় পায় না।
৪. মানুষ এমনভাবে জীবনযাপন করে যেন কখনো মরতে হবে না, আবার এমনভাবে মরে যায় যেন কখনো বেঁচেই ছিল না।
৫. হিংস্র বাঘের ওপর দয়া করা নিরীহ হরিণের ওপর জুলুম করার নামান্তর।
৬. যে সৎ, নিন্দা তার কোনো অনিষ্ট করতে পারে না।
৭. প্রতাপশালী লোককে সবাই ভয় পায় কিন্তু শ্রদ্ধা করে না।
৮. দেয়ালের সম্মুখে দাঁড়িয়ে কথা বলার সময় সতর্ক হয়ে কথা বল, কারণ তুমি জান না দেয়ালের পেছনে কে কান পেতে দাঁড়িয়ে আছে।
৯. মুখের কথা হচ্ছে থুথুর মতো, যা একবার মুখ থেকে ফেলে দিলে আর ভিতরে নেওয়া সম্ভব নয়। তাই কথা বলার সময় খুব চিন্তা করে বলা উচিত।
১০. মন্দ লোকের সঙ্গে যার ওঠাবসা, সে কখনো কল্যাণের মুখ দেখবে না।
১১. দুই শত্রুর মধ্যে এমনভাবে কথাবার্তা বল, যেন তারা মিলে গেলেও তোমাকে লজ্জিত হতে না হয়।
১২. পরকালে যাহা আবশ্যক তাহা যৌবনে সংগ্রহ করিও।
১৩. অযোগ্য লোককে দায়িত্ব দেওয়া চরম দায়িত্ব হীনতা।
১৪. মিথ্যাবাদীর স্বরণশক্তি অধিক।
১৫. ভদ্র লোক সেই, যে সত্যের উপাসক।
১৬. বল অপেক্ষা কৌশল শ্রেষ্ঠ ও কার্যকারী।
১৭. প্রতিশ্রুতি খুব কম দিও । দয়া করবার আগে ন্যায়বান হও অজ্ঞের পক্ষে নীরবতাই হচ্ছে সবচেয়ে উত্তম পন্থা। এটা যদি সবাই জানত তাহলে কেউ অজ্ঞ হত না।
১৮. বাঘ না খেয়ে মরলেও কুকুরের উচ্ছিষ্ট মুখে তুলে না। বিদ্যা এমন সম্পদ যা বিতরনে বাড়ে ।
১৯. ইহ- পরকালে যাহা আবশ্যক তাহা যৌবনে সংগ্রহ করিও।
২০. না শিখিয়া ওস্তাদি করিও না।
২১. কোন কাজেই প্রমাণ ছাড়া বিশ্বাস করিও না।
২২. তিন জনের নিকট কখনো গোপন কথা বলিও না- (ক) স্ত্রী লোক. (খ) জ্ঞানহীন মূর্খ. (গ) শত্রু।
২৩. পথের সম্বল অন্যের হাতে রাখিও না।
২৪. পরিক্ষা ভিন্ন কিছু বিশ্বাস করিও না।
২৫. বানরকে স্নেহ করিলে মাথায় উঠে।
২৬. বিড়ালকে স্নেহ করিলে কোলে উঠে।
২৭. সকল কাজেই মধ্যপন্থা অবলম্বন করিও।
২৮. যে মিথ্যায় মঙ্গল নিহিত তাহা অসৎ উদ্দেশ্যে প্রণোদিত সত্য অপেক্ষা শ্রেষ্ঠতর।
২৯. এক জনের জুতো নেই। এই নিয়ে তার আক্ষেপ। তার আক্ষেপ ঘুচল। কেননা সে দেখল এক জনের পা-ই নেই।
৩০. একজন ঘুমন্ত ব্যক্তি আর একজন ঘুমন্ত ব্যক্তিকে জাগ্রত করতে পারে না।